Progressive overload

Progressive overload

প্রাচীন গ্রীসের এক বিখ্যাত এথলেট ছিল, ইতিহাস যাকে 'Milo of Croton’ নামে স্মরণ রেখেছে। সে কুস্তিতে টানা ৬ বার অলিম্পিক জয় করেছিল। শক্তিমত্তার দিক দিয়ে সে ছিল প্রবাদপ্রতিম। তার ব্যাপারে এমন কথা প্রচলিত আছে যে সে একটা পূর্ণবয়স্ক ষাঁড়কে কাঁধে নিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারতো। কিভাবে সেই এই বিদ্যা রপ্ত করেছে আজকে সেই কথাই বলবো।

Milo যখন অলিম্পিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করে তখন সে একটা ছোট গরুর বাছুরকে প্রতিদিন কাঁধে করে নিয়ে ঘুরতো। যেহেতু বাছুরের ওজন তেমন বেশী না, তাই তার তেমন কষ্ট হতো না। কিন্তু আস্তে আস্তে বাছুরের ওজন বাড়তে থাকলেও যেহেতু সে নিয়মিত এই কাজটা করতো, তারও এই বেশী ওজন বহনের সক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এভাবে করে যখন বাছুরটা বড় হয়ে একটা পূর্ণবয়স্ক ষাঁড়ে পরিণত হয়, ততদিনে Milo এর শক্তিও এত বেড়ে গেছে যে তার জন্য এই ষাঁড়কে বহন করাও সহজ হয়ে গেছে।

ভাবনার বিষয় হলো Milo যদি হঠাৎ করে একদিন মনে করতো এখন থেকে আমি একটা ষাঁড়কে বহন করার চেষ্টা করবো, তাহলে কিন্তু সে পারতো না। এই যে সে অল্প অল্প করে বেশী লোড নেয়ার প্র্যাকটিস করতে করতে একটা সময় গিয়ে অনেক বেশী লোড নেয়ার শক্তি অর্জন করেছে, এই ধারণাটাই 'Progressive overload’ নামে পরিচিত। এখনকার সময়ে Fitness বা Body building ইন্ডাস্ট্রিতেও এই আইডিয়াটাই কাজে লাগানো হয়। নিয়মিত এক্সারসাইজের পরিমাণ এবং ইন্টেন্সিটি বাড়িয়ে বাড়িয়ে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাটা খুব প্র্যাক্টিক্যাল একটা স্ট্রাটেজি হিসেবে ফিটনেস এক্সপার্টটা ব্যবহার করেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই একই আইডিয়া ব্যবহার করে কিন্তু আমরা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারীতাও বাড়াতে পারি। যেটাকে বলা হয় Cognitive progressive overload.

চিন্তা করে দেখেন তো যে ম্যাথের ব্যাসিক ভালোমতো পারে না, তাকে যদি হঠাৎ ক্যালকুলাস শেখানো শুরু করা হয় সে চোখে চাঁদ তারা দেখা শুরু করবে, তাই না? কিন্তু তাকে যদি প্রথমে ম্যাথের ব্যাসিক শেখানো হয় এবং আস্তে আস্তে সহজ থেকে কঠিন ম্যাথগুলো প্র্যাকটিস করানো হয় তাহলে একটা সময় শুধু ক্যালকুলাস না, এর চাইতেও কঠিন কঠিন ম্যাথ করাও তার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

যে কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে হুট করে একেবারে কঠিন কোনো টপিক শিখতে বসলে হতাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এজন্য প্রথমে দরকার ঐ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাগুলো ক্লিয়ার করে নেয়া।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রাথমিক ধারণা ক্লিয়ার করে নেয়ার পরেও অনেক সময় আমাদের খুব একটা প্রগ্রেস হয় না। কেন জানেন? কারণ আমাদের ব্রেইন আসলে খুব অলস। যেই কাজ করতে কষ্ট বেশি হয়, সে অনেকভাবে চেষ্টা করে সেই কাজটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। এ কারণে মাথা খাটানোর কোনো একটা কাজ করতে বসলে আমাদের ঘুম আসে, উঠে বাইরে যেতে ইচ্ছে করে, ফেসবুকটা খুলে স্ক্রল করে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করে। কারণ ব্রেইন চায় না তার কষ্ট হোক।

এই জায়গাটাতেই Cognitive progressive overload আইডিয়াটা বেশ কাজের। আপনি প্রতিদিন অল্প অল্প করে এখন যা পারেন তার থেকে একটু কঠিন বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করবেন।

যেমন আপনি যদি এখন প্রব্লেম সল্ভিং সাইটে বিগিনার লেভেলের প্রব্লেম সল্ভ করতে পারেন, আস্তে আস্তে আপনি মিডিয়াম লেভেলের প্রব্লেম সল্ভ করার চেষ্টা করবেন। তারপরে হার্ড প্রব্লেম।

আবার আপনি যদি এখন জুনিয়র লেভেলের ডেভেলপার হন, তাহলে আপনি জব সাইটগুলোতে মিড-লেভেলের ডেভেলপারদের জব পোস্টগুলো দেখবেন, সেখানে কি কি রিকোয়ারমেন্ট চাচ্ছে, তার কি কি আপনি পারেন না, সেগুলো শেখার চেষ্টা করবেন। মিড লেভেলের ডেভেলপাররা দেখবেন সিনিয়র ডেভেলপারদের জব পোস্টগুলো।

এভাবে করে আপনি যখন প্রতিনিয়ত নিজেকে পুশ করবেন, একটু একটু করে চ্যালেঞ্জ নিবেন, কঠিন কাজগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে ট্যাকেল করার চেষ্টা করতে থাকবেন, একটা সময় বড় বড় চ্যালেঞ্জ নেয়াটা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন একটু একটু করে প্রগ্রেস মাস বা বছর শেষে আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। এজন্য আপনি যদি আসলেই নিজের লাইফে বা ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে চান, তাহলে নিয়মিত নিজের প্রগ্রেস ট্র্যাক করা এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জিং জিনিসগুলো শেখার চেষ্টা করাটা অত্যন্ত জরুরী।